বিশ্বধনী বিল গেটস রহস্য - Online Business

Home Top Ad

 2


Post Top Ad

Tuesday, February 13, 2018

demo-image

বিশ্বধনী বিল গেটস রহস্য

bill-gates_8886

বিল গেটস হলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর তৈরি করা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় তিনি রয়েছেন শীর্ষস্থানে। তার ধনসম্পদের মোট মূল্যমান ৭৬ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।
গত এক বছরে তার ধনসম্পদের মূল্য বেড়েছে ৯০০ কোটি ডলার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সহপাঠী ও বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে বেসিক প্রোগ্রাম লিখেন। তারপর সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটিং জগতে আনেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট-সহ তার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মেধার সঙ্গে যোগ হয় পরিশ্রম। স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার অনবদ্য চেষ্টা ও একাগ্রতা তাকে করে তুলেছে বিশ্ব ধনী, বিশ্বের সবচেয়ে প্রশংসিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন।

কাজের প্রতি তিনি এতটাই একাগ্র, একনিষ্ঠ হওয়ার অনন্য গুণাবলীর কারণে অধরা স্বপ্নকেও ছুঁয়ে দেখেছেন তিনি। কিন্তু কীভাবে বিল গেটসের এত সফলতার গোপন রহস্য কী জানতে চাইলে তিনি যে উত্তরটি দেন সেটি স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় সবাইকে অবাক করে। তার ধনী হওয়ার রহস্য কী? তার উত্তরে বলেন, ‘আমাদের জন্য সফলতার প্রথম মূলমন্ত্র হলো, সব সময় খুব চৌকস ব্যক্তিদের কাজে নিয়ে আসুন। আমরা যদি উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করে পূর্ণগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে না পারি, তাহলে পেছনে পড়ে থাকাটাই হবে অনিবার্য পরিণতি। বদৌলতে কোম্পানিও বড় জোর মাঝারি বা নয় ভালো, নয় খারাপ অবস্থায়ই থেকে যাবে। আমি কঠিন কাজের জন্য একজন অলস ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করি। কারণ, একজন অলস ব্যক্তিই কাজটি সম্পন্ন করার সহজ উপায় খুঁজে পান।’



এক নজরে :

বিল গেটস। বিশ্বের সেরা ধনী। এ পরিচয়েই তাকে চেনে বিশ্ববাসী। তার পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। তার জন্ম অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরে। তিনি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং সাবেক সিইও। বিল গেটস বিয়ে করেন ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি। তার স্ত্রীর নাম মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ। বিল গেটস উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র। বিল গেটসের বাবা একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ছিলেন। তার মায়ের নাম মেরি ম্যাঙ্য়েল গেটস। শৈশবে বাবা-মা তাকে আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি লেকসাইড স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৭৩ সালে পাস করেন। তিনি স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ এর মধ্যে ১৫৯০ পান এবং ১৯৭৩ এর শরতে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ড্রপ আউট হয়ে যান। তার সাফল্যের সূচনা হয় ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১.০ সংস্করণ প্রকাশ করার মাধ্যমে। বর্তমানে উইন্ডোজ পৃথিবীর একটি অন্যতম কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম। তিনি বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। মজার ব্যাপার হলো সে তালিকায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে।


অঢেল অর্থের বিচিত্রতা :

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি, বিল গেটস। তার অর্থ-বিত্তের পরিমাণ এতই বেশি যে, এ নিয়ে মজার সব তথ্য উপস্থাপন করা যায়। অবিশ্বাস্য সে তথ্যগুলো এখানে-

  • বিল গেটস যদি একটি দেশ হতেন তাহলে তিনি পৃথিবীর ৩৭তম ধনী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন।
  • তার হাত থেকে যদি এক হাজার টাকা পড়ে যায় তবে তার সেই টাকা তোলার কোনো দরকারই পড়বে না। কারণ যে ৪ সেকেন্ডে তিনি টাকা তুলবেন সে সময়ের ভেতর অলরেডি তার থেকে অনেক বেশি আয়ই হচ্ছে অন্যদিকে। কিন্তু তাই বলে বাস্তবে বিল গেটস এক হাজার নোট তুলে নেন না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি একটি সংখ্যাতাত্তি্বক হিসাব মাত্র।
  • তিনি তার ইউনিভার্সিটির এক টিচারকে তার নিজের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন তার যখন ৩০ বছর হবে তখন তিনি মিলিয়নার হবেন কিন্তু তিনি বিলিওনার হন ৩১ এর আগে।
  • যদি বিল গেটসের সব টাকাকে এক ডলারের নোট করা হয় তাহলে সেই টাকা দিয়ে চাঁদ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত ১৪টা রাস্তা বানানো যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এমন রাস্তা তৈরি করতে হলে একনাগাড়ে ১,৪০০ বছর কাজ করতে হবে।
  • প্রতি সেকেন্ডে তিনি প্রায় ২৫০ ইউএস ডলার আয় করেন, মানে এক দিনে ২০ মিলিয়ন আর এক বছরে ৮ বিলিয়ন।
  • তিনি পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষকে যদি ১৫ টাকা করে দান করেন তবুও তার পকেটে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পড়ে থাকবে।
  • আমেরিকা ৫.৬২ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণী অন্য কিছু দেশের কাছে অনেকদিন থেকে। বিল গেটসের কাছে যদি এই ঋণ শোধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তিনি তা ১০ বছরের আগে শোধ করে দিতে পারবেন।
  • তিনি যদি ৭৭ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন তাহলে তাকে ৬.৭৮ মিলিয়ন ডলার প্রতিদিন খরচ করতে হবে তার মৃত্যুর আগে সব সম্পদ শেষ করতে চাইলে।



মেধাবীর অবিশ্বাস্য উত্থান :
মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন বিল গেটস। বিল গেটসের এই অঢেল সম্পতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির পেছনে রয়েছে মাইক্রোসফট-এর জন্ম। সফটওয়্যার তৈরির মৌলিকত্ব আনয়নে কম্পিউটিং জগৎ আরেক প্রজন্মে পা দেয়। এই মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাই বদলে দেয় বিল গেটসকে। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এর ছাত্র বিল গেটস ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াশিংটন স্টেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পল অ্যালেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জন্য বেসিক প্রোগ্রাম লিখেন। তখন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি প্রযুক্তির ইতিহাসে কত বড় বিপ্লব আনতে যাচ্ছেন তারা। পল অ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে যোগদান করলেও বিল গেটস সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার জগতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৭৭ সালে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। মাইক্রোসফট এর সব থেকে বেশি পরিচিত পণ্য হচ্ছে উইন্ডোজ। ১৯৮৫-এর আগেই উইন্ডোজ বাজারে এনেছিল মাইক্রোসফট। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি বাজারে ছাড়ে উইন্ডোজ ১.০১। কিছু ত্রুটি দূর করে অ্যাপলের কাছ থেকে কিছু ফিচার নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এটি। এরপর নব্বইয়ের দশকে পিসির ওএসের বাজারে একচেটিয়া অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয় মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ-১ বাজারে ছাড়ার পর ২০০১ সাল পর্যন্ত এর ব্যাকআপ দিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ-৮ নিয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সেবা দেবে প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট দিনে দিনে মূলত বিভিন্ন কম্পিউটার ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যার তৈরি, লাইসেন্স দেওয়া এবং পৃষ্টপোষকতা করে থাকে। ডেভেলপারদের জন্য মাইক্রোসফট ভিজ্যুয়াল স্টুডিও এবং মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদের প্রতিটি সফটওয়্যারই ডেস্কটপ কম্পিউটার বাজারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও মাইক্রোসফট এমএসএনবিসি কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, এমএসএন ইন্টারনেট পোর্টাল, মাইক্রোসফট এনকার্টা মাল্টিমিডিয়া বিশ্বকোষের মালিক।


সন্তানদের অর্থবিত্ত থেকে দূরে রাখেন:
এত অর্থসম্পদ যার তার সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই সচেতন বাবার ভূমিকায় থাকেন বিল গেটস। তার স্ত্রীও একইভাবে তাদের বিলিয়ন ডলারের অর্থবিত্ত থেকে তাদের বাড়ন্ত তিন সন্তানকে দূরে রাখার জন্য কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তথ্যটি জানা যায়, কানাডায় টেড ২০১৪ কনফারেন্সে বিল ও মেলিন্ডা গেটস অর্থবিত্তের মাঝে তাদের সন্তানকে কিভাবে বড় করলেন, এমন এক প্রশ্নের মুখোমুখি হলে খোলামেলা এই উত্তর দেন এই দম্পতি। গেটস দম্পতি তাদের তিন সন্তানকেই বিলিয়নিয়ার করার মতো অর্থবিত্ত আছে। কিন্তু প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। গেটস বলেন, ‘আমরা একটা ব্যালেন্স রাখতে চেয়েছিলাম যেন তাদের যা ইচ্ছা তাই করার মতো স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু তাদের প্রতি অনেক অর্থ ঢেলে তাদের বাইরে বেরোনোর পথ বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’

গেটস আরও বলেন, ‘তাদের নিজেদের কাজ অর্থপূর্ণ ও অনেক গুরুত্ব বহন করে এ বিষয়টা বোঝার প্রয়োজন ছিল।’ গেটস দম্পতির এ মানসিকতাকে ‘অ্যান্টি-প্যারিস হিলটন অ্যাপ্রোচ’ বলে উল্লেখ করেছে ওইয়ার্ড ম্যাগাজিন।


আসলেই যেখানে সেখানে হাজার ডলার ফেলে দেন বিল গেটস?

গুজব আর গসিপ আলোচিত ব্যক্তিদের পেছনে ছুটে চলে বাতাসের আগে। বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তি বিল গেটস, তার অঢেল সম্পত্তি। সেই অর্থের পরিমাণ এতই বেশি যে খরচ করার ক্ষেত্রই খুঁজে পাওয়া ভার! বিল গেটসকে নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত গুজবের একটি হলো তিনি নাকি বিভিন্নস্থানে এক হাজার ডলারের নোট ফেলে দিয়ে যান। তার দানশীলতা অজানা নয় বিশ্ববাসীর। শিশু, চিকিৎসা আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দান করে থাকেন সারা বছর। তার দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির নাম বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

কিন্তু তাই বলে কি সত্যি, রাস্তায়, এখানে সেখানে এক হাজার ডলার ফেলে দেন তিনি যাতে কারও কাজে লাগে? এটি নেহায়তই গুজব হয়তো। তবে এ গুজবের পেছনে একটি ঘটনা আছে। একবার বিল অসতর্ক থাকায় পকেটে থাকা এক হাজার ডলার মাটিতে পড়ে যায়।

কাজের তাড়া থাকায় বিল বিষয়টি খেয়াল না করেই গাড়ির দিকে যেতে থাকেন। পেছনে থাকা এক ব্যক্তি বিলকে বিষয়টি জানাতে একাধিকবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করেন। বিল বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। সেই থেকে ছড়িয়ে পড়ে এ গুজব। নিজের অনেক সম্পদ থাকলেও বিল অযথা খরচের ব্যাপারে কখনো উৎসাহী ছিলেন না। তাই অযথা বিভিন্ন স্থানে ডলার ফেলে রাখার বিষয়টিও সত্য নয়। এটি একটি গুজবই বটে।
 

Post Bottom Ad

undefined