অনেকেই আউটসোর্সিংয়ের ওপর একটা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বসে আছে এবং এর মাধ্যমে সময় বা অর্থ অপচয় করে এখন এর থেকে দূরেও আছে। তবে কথা হচ্ছে যা তুমি এর আগে যা চেষ্টা করেছ তা কি আসলেই যুক্তিসংগত ছিল? তুমি যে কাজের পেছনে দৌড়েছ তা কি আসলেই অর্থ ইনকামে সহায়ক?
আউটসোর্সিং না ফ্রিল্যান্সিং
তরুণদের কাছে আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো শব্দগুলো খুবই পরিচিত। কিন্তু এই শব্দ দুটির সঠিক মানে অনেকেরই অজানা। এই দুটো শব্দ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেলে তুমি হয়তো আজ রাতেই বসে যাবেন নেটে! বলি, বসার আগে একটু ভাবো। তুমি তো বাংলাদেশে, আর কাজ করছ নানা দেশের। এই টাকা তো দেশে আনতে হবে। তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরে বসে ইউরোপ বা আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে কীভাবে কাজ করবে এবং সেই কাজের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশে আনবে সে সম্পর্কে। আউটসোর্সিং নিয়ে ভুলগুলোও এবার জানব।
আউটসোর্সিং
দেশে বসে দেশের বাইরের কাজ করে টাকা আনাটাই আউটসোর্সিং। তা ছাড়া দেশের অসংখ্য মানুষ বিদেশ থেকে যে অর্থ পাঠান, যা আমরা বৈদেশিক রেমিট্যান্স হিসেবে জানি, সেটাও কিন্তু আউটসোর্সিং। তবে তরুণদের কাছে আউটসোর্সিং হিসেবে প্রথমটাই বেশি আলোচিত। এই আউটসোর্সিং অনলাইননির্ভর হলেই খোলস পাল্টে নেয়। তখন হয়ে যায় অনলাইন আউটসোর্সিং।
কাজের ধরন
তোমার বাসায় কম্পিউটার আছে এবং কম্পিউটারের সঙ্গে অনলাইন কানেকশন থাকাটাই মানে বিশ্ব তোমার হাতের মুঠোয়। সেই সঙ্গে তুমি যদি হও একজন মার্কেটিং এক্সপার্ট; বিবিএ-এমবিএ শেষ করে মার্কেটিংয়ের চ্যালেঞ্জিং পেশাটা যদি তুমি বেছে নিতে চাও, তবে তো কথাই নেই। জানো তো, বাংলাদেশের মার্কেট খুব ছোট। কোম্পানিগুলো বেতন দেয় মাঝারি মানের। তাই তোমার চোখ থাকে আমেরিকার কোনো বড় কোম্পানিতে। সেটাই তোমার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত। অনলাইনে তো থাকোই। একটু খোঁজাখুঁজি করে বিশ্বের বড় ডেভেলপার কোম্পানিগুলো বের করো। তাদের কাছে সিভি পাঠাও। কীভাবে তুমি তাদের কোম্পানির মার্কেটিং করবে তার ওপর চমৎকার কিছু আইডিয়া দাও। যেহেতু সশরীরে সেখানে যেতে পাছে না, তাই তোমার সব আইডিয়া হবে অনলাইনকেন্দ্রিক। আর উন্নত বিশ্বের মানুষ দিনের শুরুতেই তাদের মেইল চেক করে। মানে তারা অনলাইনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন তোমার সিভি ওরা পাবে, তোমাকে নিয়ে ভাবতে বসবে। হয়তো স্কাইপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে তোমার সঙ্গে ওরা কথাও বলতে পারে। এভাবেই কাজ আসতে পারে তোমার কাছে। তুমি জেনে হয়তো অবাক হবে, আমাদের দেশের অনেকেই আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে জব করছে। ওসব কোম্পানির মার্কেটিং করছে। সেখানে তারা সাপ্তাহিক বেতন নিচ্ছে ৫০০ থেকে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত। এবার তাহলে মাসিক বেতনের কথা ভাবো!
এ ছাড়া অনলাইনে আরও অনেক কাজ করতে পারো। বাংলাদেশ থেকে এখন বেশি কাজ হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ে। কাজের আছে আরও নানা ধরন। তুমি ভালো করে খুঁজলে ঠিক যে কাজ জানো, সেটিই পাবে।
বিদেশের টাকা দেশে
একটা সময় টাকা দেশে আনা কষ্টকর হলেও এখন পরিস্থিতি তেমন নয়। যেমন আপওয়ার্কের টাকা তুমি সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাংকে নিয়ে আসতে পারবে। এ ছাড়া পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড নামে একটা সার্ভিস আছে। সেই মাস্টারকার্ড বিনামূল্যে পেতে পারো। আর ওডেস্ক থেকে তোমার টাকা মাস্টারকার্ডে আনবে এবং মাস্টারকার্ডে থাকা টাকা তুমি বাংলাদেশের এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করতে পারবে।
ফ্রিল্যান্সিং ধারণা
ফ্রিল্যান্সিং মানেই স্বাধীন পেশা। তোমার যখন ইচ্ছা কাজ করবে। ইচ্ছা না হলে করবে না। ধরো, ওডেস্কে একটা কাজ করার পর তুমি চিন্তা করলে এই মাসে আর কাজ করবে না। এতে তোমাকে কেউ কিছু বলার অধিকার রাখে না। কিন্তু যদি মাস হিসেবে কাজ করো, তবে সেটা তোমাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে প্রতিদিনই করতে হবে। তুমি ইচ্ছা করলে আউটসোর্সিং কাজটা ফ্রিল্যান্সিংভাবেও করতে পারো।
ক্লিক করলেই টাকা
ক্লিক করে অর্থ আয়। সবচেয়ে বেশি নাম কামানো স্ক্যাম বোধ হয় এটাই। যদিও সত্যিকার অর্থে ইনকাম পেয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আর যারা পেয়েছে তারা এক অর্থে ভাগ্যবানও বটে। কেননা, এ ধরনের স্ক্যামগুলো শুধু প্রথম দিকে নিজেদের মার্কেটিংয়ের জন্যই পেমেন্ট দিয়ে থাকে এবং কিছুদিন পরই তাদের আসল উদ্দেশ্য বোঝা যায়। যাহোক, এসব কোম্পানি প্রিমিয়াম অফারও রাখে। প্রিমিয়াম অফারের মাধ্যমে এবং বিজ্ঞাপনের ক্লিক করানোর মাধ্যমে কিছু ইনকাম করে গায়েব হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে লিংক শেয়ার করে ইনকাম করা যায় এমন একটা পদ্ধতি ফেসবুক, টুইটার এবং আরও অনেক মাধ্যমে ইদানীং অহরহ দেখা যায়। আর এটা আসলে স্ক্যাম বা ভুয়া। তুমি নিজেই ভাবো, লিংক শেয়ার করার কারণে কেন কেউ তোমাকে অর্থ দেবে? তাদের লাভটাই বা কোথায়? এটা ঠিক কিছু কিছু কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইট বা ব্যবসাকে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করার বিনিময়ে অর্থ দিয়ে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্তও থাকে। যেমন কিছু কিনতে হবে বা তাদের সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে। আর এসব ক্ষেত্রে তোমার আমন্ত্রণ জানানো মানুষের থেকে তারা যে ইনকামটি করবে তারই একটি অংশ তোমাকে তারা দেবে। আউটসোর্সিং বা অনলাইনে ইনকামের ব্যাপারটি কোনোমতেই এমএলএম এর মতো নয়। এ রকম কোনো কিছু থেকে সব সময়ই দূরে থাকাই ভালো।
আগে টাকা
ইন্টারনেট থেকে আয় করতে কখনোই তোমাকে আগে অর্থ দিতে হবে না। যেমন জয়েন করতে বা সার্ভিস ব্যবহার করতে তোমাকে কখনোই আগে অর্থ জমা দিতে হবে না। তুমি কাজ করে যে ইনকাম করবে, তারই একটা নির্দিষ্ট অংশ মার্কেটপ্লেস কেটে নিবে। তবে কিছু মার্কেটপ্লেসে জয়েন করার সময় প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ নিতে বলে। এবং তারা ফ্রি মেম্বারশিপও রেখেছে। এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ নিতে বলার কারণ আরও বেশি পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ নেওয়ার জন্য। যেমন তোমার মাসিক বিড লিমিট (কাজ নেওয়ার জন্য মার্কেটপ্লেসের কোন প্রজেক্ট এ অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করা) বাড়িয়ে নেওয়া বা যেকোনো অপশনে অগ্রাধিকার পাওয়া ইত্যাদি। আর এ ক্ষেত্রে তা তুমি না নিতে চাইলে স্কিপ করা যাওয়ার অপশন রয়েছে। শেয়ার করে মোবাইল রিচার্জ এমন কিছুও বর্তমানে অনেক দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর সবই ভুয়া। এর পেছনে শুধু সময় নষ্ট সেই সঙ্গে তোমার টাকাও।
ওয়েবসাইট মানেই টাকা নয়
অনেকেই মনে করেন একটি ওয়েবসাইট খুললেই টাকা ইনকাম করা যায়। ওয়েবসাইটে অনেক ভিজিটর মানেও টাকা। এটাও ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া কিছুই না। এটা সত্যি যে, ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। আর করা যায় বলেই ইন্টারনেটে এত এত ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে শুধু খুললেই কে তোমাকে টাকা দেবে? কেন টাকা দেবে? ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করতে চাইলে আগে তোমাকে তা জানতে হবে এবং সেভাবেই কাজ শুরু করতে হবে।
ফেসবুকে লাইক
বর্তমানে অনেককে ফেসবুক লাইক নিয়ে টানাটানি করতে দেখছি। আর এদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল এদের ধারণা অনেক লাইক থাকলে টাকা ইনকাম করা যায়। সেটা পার্সোনাল প্রোফাইল হোক আর ফেসবুক পেইজ হোক। আর অনেকে এটাও মনে করেন যে টাকা দেবে স্বয়ং ফেসবুক। এটাও ভ্রান্ত ধারণা। উল্টো ফেসবুক থেকেই তোমার ব্যান (চিরতরে ব্লক) হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফেসবুক কখনোই কাউকে লাইক বেশি থাকার জন্য অর্থ দেয় না। তবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায় যা ভিন্ন অর্থে। যেমন তোমার ওয়েবসাইটে ফেসবুক পেইজ থেকে ভিজিটর পাঠানোর মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকেই অর্থ ইনকাম করার সুযোগ বাড়িয়ে বা কোন পণ্যের মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে।
এ রকম আরও অনেক ধরনের স্ক্যাম রয়েছে। যেকোনো নতুন কিছু আসলেই শুরুতেই কাজে নেমে না পড়ে আগে একটু যাচাই করো। বুঝতে চেষ্টা করো তারা কেন অর্থ দেবে? তাদের লাভটা কী? যদি তাও উত্তর না পাও তবে ইন্টারনেটেই একটু খোঁজ করো। তাদের সম্পর্কে তথ্য বের করতে চেষ্টা করো। এরপর নিজেই সিদ্ধান্ত নাও।
ক্লায়েন্ট পাবে কীভাবে
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্রিল্যান্সাররা সবচেয়ে বেশি কাজ পায় অন্য কারও রেফারেন্সের মাধ্যমে। তোমার যদি পরিচিত এমন কেউ না থাকে যে তোমাকে রেফার করতে পারে, তাহলে সুন্দর প্রোফাইল বানিয়ে, সঠিক টাকা বিড/আওয়ারলি রেট নির্ধারণ করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো। প্রথম কাজ পাওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। তুমি তিন দিনেও কাজ পেতে পারো, আবার তিন মাসও লেগে যাতে পারে। এটি তোমার ধৈর্যের একটি বড় পরীক্ষা। একবার কাজ পেয়ে গেলে, সেই কাজটি মন দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে শেষ করো। এতে ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে তোমাকে ভালো ফিডব্যাক দেবে। পরবর্তী সময়ে তুমি এই ক্লায়েন্টের কাছ থেকেই নতুন কাজ পেতে পারো।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস
আউটসোর্সিং কাজ পেতে শুরুতে একটু কষ্ট হয়। অনলাইনে খুঁজে কোনো কোম্পানি পাচ্ছো না, বা যাদের পেলে তাদের এই মুহূর্তে কোনো এমপ্লয়ি দরকার নেই। আবার অনেক কোম্পানি আছে, যাদের লোক দরকার কিন্তু লোক খুঁজে পাচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধান করা হয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে। এখানে শ্রম কেনাবেচা হয়। আউটসোর্সিং কাজ খুঁজতে ঢুঁ মারতে পারো বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে। এখানে কিছু মার্কেটপ্লেস তুলে ধরা হলো।
আপওয়ার্ক [www.upwork.com] :
এই মার্কেটপ্লেসের ইউজার ইন্টারফেস ভালো। সহজেই তুমি বিভিন্ন অপশন খুঁজে পাবে। এখানে বাংলাদেশি অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। আমাদের দেশে এদের কান্ট্রি অফিসও আছে।
ইল্যান্স [www.elance.com] :
একটু অ্যাডভান্স লেভেল পারসনদের জন্য এ সাইট। পেমেন্টও বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইল্যান্সেরও অফিস রয়েছে।
গুরু [www.guru.com] :
এখানে প্রফেশনাল টাইপ জব বেশি। তুমি যদি প্রফেশনাল জব খোঁজো, তাহলেও এখানে দেখতে পারো।
ফ্রিল্যান্সার [www.freelancer.com] :
বাংলাদেশের টপ লেভেলের কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার এই মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমেই আর্নিং লাইফ শুরু করেছিলেন।
ফাইভআরআর [www.fiverr.com] :
এখানের সব কাজের প্রাইস পাঁচ ডলার। কাজের ধরনও আলাদা। ধরো, তুমি যে ধরনের কাজ জানো, সেটা লিখে এখানে পোস্ট দেবে।