ডলার নয়, একমাত্র বৈশ্বিক মুদ্রা হবে বিটকয়েন : ডরসি রিপোর্ট - Online Business

Breaking

Home Top Ad

 


Monday, April 2, 2018

ডলার নয়, একমাত্র বৈশ্বিক মুদ্রা হবে বিটকয়েন : ডরসি রিপোর্ট


পরবর্তী দশকের মধ্যে বিশ্বের একমাত্র মুদ্রা হবে বিটকয়েন এমনটাই আশা করছেন মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার ও মোবাইল লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্কয়ার প্রধান জ্যাক ডরসি।
ব্রিটিশ পত্রিকা সানডে টাইমস-কে বিটকয়েন-এর ভবিষ্যত নিয়ে বলতে গিয়ে একথা জানিয়েছেন ডরসি।

বিটকয়েনে একজন ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীও তিনি। তার প্রত্যাশা এক দশকের মধ্যে কফির মতো সাধারণ জিনিসগুলোর লেনদেনও হবে বিটকয়েন দিয়ে এবং দশ বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে এর সম্প্রসারণ হবে, “কিন্তু এটি আরও দ্রুতও হতে পারে” বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সানডে টাইমস।

আগের বছর নভেম্বরে ডরসি’র আরেক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার জানায়, তারা নিজেদের ক্যাশ অ্যাপে বিটকয়েনের কেনাকাটা চালু করবে। এছাড়া লাইটিনিং ল্যাব নামের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানেরও বিনিয়োগকারী হলেন ডরসি। বিটকয়েনের ব্যবহার দ্রুত এবং সহজ করার প্রযুক্তি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে লাইটিনিং ল্যাব। ডরসি বলেন, “বিটকয়েন ধীর গতির এবং দামী, কিন্তু যখন বেশি বেশি মানুষ এটি কিনছেন এই বাধাগুলো আর থাকছে না।”

প্রথমবার যখন এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আসে তখন ডলার এবং স্বর্ণের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছিল একে। সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েনের দামেও দেখা গেছে বিশাল তারতম্য। এক পর্যায়ে প্রতি বিটকয়েনের মূল্য ছিল প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলার। সেখান থেকে দাম কমে আগের মাসে আট হাজার ডলারের নিচে নামে প্রতি বিটকয়েন।

অনলাইনে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর পাশাপাশি কেনাকাটা করা যায় বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়। নাকামোতোর উদ্ভাবিত সে ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন।

বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি।

সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েন আলোচনায় আসার কারণ মূল্যস্ফীতি। বিটকয়েনে যারা বিনিয়োগ করেছিল, হঠাৎই তাদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। কিন্তু বিটকয়েন কেন জনপ্রিয় হচ্ছে? নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই এতে লেনদেন করা যায়। অন্যদিকে লেনদেনের ব্যয় খুব কম। তবে সবচেয়ে বড় কারণটা হলো বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েক গুণ লাভ হবে, এমন একটা ধারণা অনেকের মধ্যে আছে।

এখনো অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটকয়েন। ফলে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ সম্মেলনের এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির কাজ হবে বাংলাদেশে কীভাবে দ্রুত ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন করা যায়, তা খতিয়ে দেখা।

বিটকয়েন নিয়ে কিছু তথ্য থাকছে এখানে। বিটকয়েন সীমিত: প্রচলিত পদ্ধতিতে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েনের প্রচলন সম্ভব। অর্থাৎ সরবরাহ সীমিত। সে জন্যই বিটকয়েনকে স্বর্ণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। খনি থেকে উত্তোলনের একপর্যায়ে গিয়ে যেমন স্বর্ণের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে। এরপর উত্তোলিত স্বর্ণের বিকিকিনি হতে পারে। তবে নতুন করে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। বিটকয়েনের ধারণাও তা-ই। অ্যালগরিদমের সমাধানের মাধ্যমে বিটকয়েন ‘উত্তোলন’ করতে হয়, যা বিটকয়েন মাইনিং হিসেবে পরিচিত। আর বর্তমান হারে চলতে থাকলে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন মাইনিং করতে ২১৪০ সাল লেগে যাবে।

ভগ্নাংশেও কেনা যায় বিটকয়েন: বিটকয়েনের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এর ভগ্নাংশ সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে। অর্থাৎ বিটকয়েনের ভগ্নাংশ কেনাও সম্ভব। উদ্ভাবকের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিটকয়েনের ভগ্নাংশ সাতোশি নামে পরিচিত। এক বিটকয়েনের ১০ কোটি ভাগের এক ভাগ হলো এক সাতোশি।

দেড় হাজার কোটি ডলারের বিটকয়েন চুরি: অন্যান্য মুদ্রার মতো বিটকয়েনও নির্দিষ্ট হারে বিনিময় করা হয়। এই বিনিময় হয় বিটকয়েন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। এক্সচেঞ্জ থেকে ৯ লাখ ৮০ হাজার বিটকয়েন চুরি হয়েছিল। বর্তমান বিনিময় হারে যার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। চুরি যাওয়া বিটকয়েনের কিছু অংশ উদ্ধার হলেও চুরির পেছনের রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

বিটকয়েনের এক হাজার প্রতিদ্বন্দ্বী: বিটকয়েন একধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি না। বিটকয়েনের সাফল্যের পর এমন এক হাজারের বেশি ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করা হয়। সব অবশ্য বিটকয়েনের মতো সফল হয়নি। তবে এ থেকে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রানির্ভর ভবিষ্যৎ আর্থিক ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বিটকয়েন দুভাগে বিভক্ত: বিটকয়েনের সফটওয়্যার কোডে বিভক্তির কারণে চলতি বছরের আগে কেনা সব বিটকয়েন ভার্চ্যুয়ালি দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বিটকয়েনের পাশাপাশি বিটকয়েন ক্যাশ নামের আরেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভব হয়। অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ আগস্টের আগে যদি কেউ কোনো বিটকয়েন কিনে থাকে, তবে একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে একটি বিটকয়েন ক্যাশের মালিক হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ১ বিটকয়েন ক্যাশের দাম ১ হাজার ৩০০ ডলার।