এটা সেই বিজনেস মডেল যা এপ্লাই করে আমাজান আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা সেই মডেল যার উপর দাঁড়িয়ে বিশ্বের অগণিত বিজনেস সাফল্যের শীর্ষে উঠেছে। এটা সেই মডেল যা কাজে লাগিয়ে গোয়াল ঘরে বিজনেস শুরু হয়ে মাল্টি বিলিওনার হয়েছে। ওর্য়াল্ড ক্লাস টেলেন্ট, এন্টারপ্রিনিউয়ার, বিজনেস ম্যাগনেটরা এই মডেল অহরহ অনুসরণ করছে। বাংলাদেশেও ভুরি ভুরি এক্সাম্পল রয়েছে (অফলাইন বিজনেস )। অনলাইন বিজনেসের গোড়াপত্তন থেকেই আপনাকে এই মডেল অনুসরণ করতে হবে। তাহলে সাকসেস অনিবার্য।
বিজনেস গ্রোথ মডেলের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ ইলিমেন্ট:
মার্কেট রিসার্চ
ট্রাফিক সোর্স
অফারিং লিড ম্যাগনেট
অফারিং ফ্রীবি
অফারিং কোর প্রোডাক্ট
অফারিং প্রফিট অপটিমাইজার
এস্টাবলিশিং রিটার্ন পাথ
এর মধ্যে প্রথম তিনটি আলোচনা করেছি। আজকে অফারিং ফ্রীবি দিয়ে শুরু করবো।
বিজনেস গ্রোথ মডেল ৪: অফারিং ফ্রীবি
মনে আছে কি, বিজনেস তিনভাবে বড় ও প্রসারিত হয়। প্রথমটি কি? হ্যা, প্রথম পন্থা হলো: ইনক্রিজ দ্যা নাম্বার অফ কাস্টমার। ওয়েবপেজে লিড ম্যাগনেট উপস্থাপন করে আমরা শুধু লিড পেয়েছি। এখনো কাস্টমার পাইনাই। লিড ম্যাগনেট এ আপনি আহ্বান জানিয়েছেন : ওয়েবসাইটে আগন্তুক ব্যক্তিদের স্পেসিফিক গুরুতর সমস্যার স্পেসিফিক সলিউশন রয়েছে আপনার কাছে। তাই তারা সাইন আপ করবে। আপনি কন্টাক্ট ইনফরমেশন পাবেন যাতে সেই স্পেসিফিক অফার তাদের প্রদান করতে পারেন। আর এই অফারটি থাকবে সুপার ভ্যালুয়েবল, হাইয়েস্ট কুয়ালিটি, বাট অলমোস্ট ফ্রি। হতে পারে একদম ফ্রি অথবা নামমাত্র মূল্য (১০০ ডলারের প্রোডাক্ট মাত্র ১ ডলারে !)। হ্যা, প্রফিট নয়,ভ্যালুয়েবল একজন কাস্টমার অর্জন করাই এই ফ্রীবি’র মূল লক্ষ্য। এই কাস্টমারের ট্রাস্ট অর্জন মহা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। ইনস্ট্যান্ট লস হয়েছে, মনে করতে পারেন। কিন্তু, আদৌ লস হয়নি। আপনি হাইয়েস্ট কুয়ালিটি, সুপার ভ্যালুয়েবল প্রোডাক্ট টপমোস্ট ইন্টিগ্রিটির সহিত ডেলিভারি করেছেন। প্রোডাক্ট পেয়ে, ইউজ করে কাস্টমার অভূতপূর্ব খুশি। পরবর্তীতে কোর প্রোডাক্ট অফার করবেন, এই কাস্টমার আপনার অফার গ্রহণ করবে। আর এর ফলে ওই কাস্টমার আপনার বিজনেসের সারা জীবনের বাঁধা কাস্টমার। ওই ব্যক্তি আর কোথাও যাবে না। সারাজীবন আপনার থেকে কেনাকাটা করবে।
প্রস্পেক্টকে কাস্টমারে কনভার্ট করাই এই ফ্রীবির মূল উদ্দেশ্য। এই ফ্রীবির কমন পন্থা হলো : কোনো প্রকার লাভের আশা বাদ দিয়ে উৎপাদন মূল্যে বিক্রয় করা অথবা একদম লস দিয়ে (উৎপাদন খরচও আপনার পকেট থেকে দিবেন) বিক্রয় করা।
ট্রাফিক টেম্পারেচার তিন প্রকার : কোল্ড ট্রাফিক (যে কোনো দিন আপনার প্রোডাক্ট কেনাকাটা করেনি), ওয়ার্ম ট্রাফিক (আপনার বিজনেস ব্র্যান্ডের সাথে পরিচিত) আর হট ট্রাফিক (অলরেডি কেনাকাটা করেছে )।
কোল্ড ট্রাফিক কেনাকাটা করতে চায় না। এর একটাই কারণ, তাদের সন্দেহ যে, প্রোডাক্ট ভালো হবে না। অথবা আতঙ্কগ্রস্ত (অন্য মার্কেট থেকে প্রোডাক্ট কিনে অভিজ্ঞতার ফলে) যে, বাজে প্রোডাক্ট হবে। এইরকম বহু কারণ রয়েছে। এইসমস্ত কারণে আপনার ওয়েবসাইটে এসেও, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখেও, পণ্যের প্রয়োজন থাকা সত্বেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। কারণ এতগুলো টাকা অযথা কেউ পানিতে ঢালতে চায় না। কিন্তু যদি ১০০ ডলারের প্রোডাক্ট ১ ডলারে দেয়া হয়, তাহলে তার ভাবনাটি এইরকম : মাত্র ১ ডলার ! ওকে, তাহলে নিয়ে দেখি-ই না ! কি হয়। এই মোটিভেশন থেকে কাস্টমার প্রোডাক্ট কিনে মাত্র ১ ডলার দিয়ে। পরবর্তীতে প্রোডাক্ট ইউজ করে যখন বুঝতে পারে, “ইয়েস, দিজ ইজ রিয়েলি এন এক্সসিলেন্ট প্রোডাক্ট”, তখন সে আপনাকে খুঁজে বেড়ায়, পরবর্তীতে সারা জীবনের বাঁধা কাস্টমার হওয়ার জন্য।
আপনিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিচ্ছেন যে, শুধুমাত্র নিউ কাস্টমারদের জন্য এইভাবে লস দিয়ে প্রোডাক্ট সেল করছেন। আপনার বাড়িতে (ওয়েবসাইটে ) নতুন মেহমান (ভিজিটর ) এলে আপনি এইভাবে আদর আপ্যায়ন করেন। এটা আপনাদের বংশগত ঐতিহ্য।
মহামূল্য দিয়ে আপনি একজন কাস্টমার পেয়েছেন। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কি থাকতে পারে?
ফ্ল্যাশ সেল : এই যে, মহামূল্যবান প্রোডাক্ট নামমাত্র মূল্যে প্রদান করছেন, এর আরেক নাম ফ্ল্যাশ সেল। নরমাল ওয়েতে অগ্রসর হলে কোল্ড ট্রাফিককে ওয়ার্ম আর হট ট্রাফিকে কনভার্ট করা অনেক কষ্টকর কাজ। ব্লগ এ ইনভাইট করা, ওয়েবিনার/সেমিনার/লাইভ এ ইনভাইট করে কন্টিনিউয়াস মোটিভেশন করতে থাকা, ইমেইল সিরিজ, ফলো আপ ইত্যাদি বহু কাজকর্ম করতে হয়। আর এই কাজগুলি বি টু সি বিজনেসের জন্য “খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি ” এই টাইপ হয়ে যায়। আর এইসব ঝামেলা এড়াতে উত্তম পন্থা হচ্ছে : ফ্ল্যাশ সেল- ৮০-৯০% ছাড়ে কিনুন, নামমাত্র মূল্যে।
বিশেষ খেয়াল রাখবেন : শুধু কোল্ড ট্রাফিকের কাছেই এই বিজ্ঞাপন যাবে। ওয়ার্ম আর হট ট্রাফিকের কাছে এই বিজ্ঞাপন কোনো অবস্থাতেই যাবে না। বায়ারের লিস্ট ইনক্রিজ করাই এর উদ্দেশ্য। আর আপনার মাথায় থাকবে, পরবর্তীতে এই কাস্টমারদের কাছে যথাযথ মূল্যের কোর প্রোডাক্ট অফার করবেন।
মেকানিজম ভালো করে রপ্ত করতে ও যথাযথভাবে এপ্লাই করতে হবে। উরাধুরা কাজ করলেই বিপদে পড়বেন- “কাস্টমার লোয়েলটি বৃদ্ধির পরিবর্তে উল্টা নিন্দামন্দ আর মার্কেট বারোটা বাজবে “, যেটা বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ সেলের নামে হচ্ছে। কিছু এক্সাম্পল দিচ্ছি:
অনেক অনেক অভিযোগ নিয়মিত আসে বড় কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের বিরুদ্ধে। একটা নমুনা কয়েকদিন আগে পড়েছিলাম :
একটা মশা মারার কামানের প্রকৃত দাম মাত্র ১২০ টাকা। সেই প্রোডাক্ট ৪০০০ টাকা দাম লিখে ফ্ল্যাশ সেল বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে : ৯৩% ছাড়ে কিনুন ! মাত্র ২৯৯ টাকায় ! একজন কাস্টমার ঝলকানি এই বিজ্ঞাপন দেখে প্রোডাক্টটি কিনলো।
কাস্টমারের বক্তব্য : এই মেশিন দিয়ে মশা মরার পরিবর্তে মশা আরো বাড়ে ! আর প্রোডাক্ট কুয়ালিটি ও খুব-ই বাজে।
রিয়েল ফ্ল্যাশ সেল হলে বিষয়টি থাকতো এইরকম :
“১২০ টাকার মশা মারার কামান কিনুন মাত্র ১ টাকায় ! এখনই অর্ডার করুন। স্টক লিমিটেড। হাড়ি আপ নাও !” আর প্রোডাক্ট কুয়ালিটির ক্ষেত্রে আপনি থাকতেন জিরো টলারেন্সে- “হাইয়েস্ট কুয়ালিটি, সুপার ভ্যালুয়েবল প্রোডাক্ট, ডেলিভারি উইথ টোটাল ইন্টেগ্রিটি”
আর বাস্তবে বাংলাদেশে কি হচ্ছে ?
যারা এই ফ্ল্যাশ সেল দিচ্ছেন ?
কি ভেবেছেন, বাংলাদেশের মানুষ মগা নাকি বোধাই ?
মনে রাখবেন, সারা দুনিয়ার কাস্টমার বিহেভিয়ার এক রকম-ই। কোনো ভিন্নতা নাই। এইসব উরাধুরা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আর এইসব ভেল্কিবাজি দেখিয়ে বেশিদিন বিজনেস করা যাবে না।
কেন এমন হচ্ছে ?
মূল মেকানিজম না জেনে বিদেশের সাইটে দেখে এমন করছেন কি?
মনে তো হয় না। মাল্টিন্যাশনাল বিজনেস হয়ে এইটুকু সাধারণ জ্ঞান থাকবে না ! আমি কিছু বুঝতে পারি না। আপনার মতামত আশা করছি।
বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ সেলের আরো কিছু বিপত্তি :
১) নিয়ম হলো, ফ্ল্যাশ সেল শুধুমাত্র কোল্ড ট্রাফিকের কাছেই হবে। তাই, বিজ্ঞাপনে শুধুমাত্র কোল্ড ট্রাফিকদের-ই টার্গেট করা হবে। বাংলাদেশে যার তার কাছে বিজ্ঞাপন শো করা হয়।
২) ফ্ল্যাশ সেলের মাধ্যমে যাদেরকে ক্রেতা হিসেবে পাওয়া গেলো, ওই ব্যক্তিদেরকে কোর প্রোডাক্ট অফার করে উচ্চমূল্যের প্রোডাক্ট কিনাতে হবে (তা না হলে ফ্ল্যাশ সেলে আপনার লস পুষবে না, এটা বিশ্ব স্বীকৃত নিয়ম)। কিন্তু বাংলাদেশে কোর প্রোডাক্ট সেলের কোনো প্রমান দেখি না (ই-কমার্স সাইটগুলোতে ফেসবুক পিক্সেলের নামে মাত্র অবস্থান, স্ট্যান্ডার্ড বা কাস্টম ইভেন্ট দেখি না, বড় একটা সাইটে ফেসবুক পিক্সেলটা পর্যন্ত সেট করা হয় নি। অথচ অহরহ ফ্ল্যাশ সেল করা হচ্ছে )।
৩) একবার ফ্ল্যাশ সেল ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার পর পরবর্তী শুরুটা কমপক্ষে দেড় দুই মাস পরে হওয়া উচিত। এই সময়ের মধ্যে এই ক্রেতাদেরকে কোর প্রোডাক্ট কেনাকাটার জন্য ফেসবুক ডায়নামিক এডস, ইমেইল ফলো আপ ইত্যাদি কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখি, কেউ কেউ দিনের পর দিন ফ্ল্যাশ সেল চালিয়ে যাচ্ছে।
৪) সেলারদের বড় অভিযোগ, মার্কেটপ্লেসগুলো তাদেরকে প্রোডাক্ট প্রাইস কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
৫) ফ্ল্যাশ সেলের মস্ত বড় কারণ হল : কাস্টমার ট্রাস্ট অর্জন। হাই কুয়ালিটি, সুপার ভ্যালুড প্রোডাক্ট উইথ ডেলিভারি বাই টোটাল ইন্টিগ্রিটি। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ সেলের ক্রেতারা অধিকাংশই চরম ক্ষিপ্ত। কি চাইলেন, আর কি হচ্ছে ! সবকিছুতে এত্ত এত্ত হযবরল অবস্থা কেন। মনে হচ্ছে, মার্কেটপ্লেসগুলো কোনো দিশা পাচ্ছে না।
বড় ভাইরা এমন করছে। আসুন, দেখি, ছোট ও মাঝারি অনলাইন বিজনেসম্যানরা কি করছে ?
বড় ভাইরা বড় বড় ছাড় (৮০-৯০%) দেয়, আর আমরা ছোট ও মাঝারি ভাইরা দিচ্ছি : ২ টা কিনলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ১৪% ছাড়, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২১% ছাড় ইত্যাদি।
এসবের ফলে কেমন রেস্পন্স পাচ্ছেন ?
কোনো স্প্লিট টেস্ট করেছেন কি?
রেজাল্ট মেজারমেন্ট ও স্কেল করেছেন কি?
বিজনেস মডেলের স্ট্রাকচার অনুযায়ী, কোল্ড ট্রাফিকের কাছে এই ধরণের অফারগুলো হিতে বিপরীত হয়। কোল্ড ট্রাফিককে ইনস্ট্যান্ট বায়ারে কনভার্ট করতে পারেন শুধুমাত্র ফ্ল্যাশ সেল উপহার দিয়ে, অথবা সিস্টেম অনুযায়ী ব্লগ, ভিডিও, ইমেইল সিরিজ ইত্যাদির মাধ্যমে কন্টিনিউয়াস ফলো আপ করার মাধ্যমে।
তাহলে, কিভাবে কি হচ্ছে?
যে যেভাবে পারছে জগাখিচুড়ি পাকাচ্ছে না তো?
আর এইসব করে গত দুই বছরের রেজাল্ট কি ?
চলুন ১-২ টা গান গাই :
রাতের তারা আমায় কি বলতে পারিস?
কোথায় আছে, কেমন আছে আমার কাস্টমার !
………………………………………………………..
আগে কত সুন্দর দিন কাটাইতাম
১ ডলারে ১০-১৫ টা অর্ডার পাইতাম।
……………………………………………
ইয়েস, ফ্রীবি, ফ্ল্যাশ সেল এইসবের মূল উদ্দেশ্য: বায়ারের লিস্ট ইনক্রিজ করা। “প্রফিট” কোনো অবস্থাতেই “বায়ারের লিস্ট” থেকে বড় অর্জন নয়। বায়ারের লিস্ট থেকেও বড় অর্জন হলো একজন সিঙ্গেল কাস্টমারের ট্রাস্ট অর্জন।
বাংলাদেশ ই কমার্স এর (বিশেষ করে বড় বড় মার্কেটপ্লেস) মস্ত বড় ঘাটতি গত ২-৩ বছরে :
- বড় বা ছোট সকলেই শুধুমাত্র ফ্ল্যাশ সেল দিচ্ছে, পরবর্তীতে কোর প্রোডাক্ট অফার করতে পারছে না, ক্রস সেল ও আপসেল দিতে পারছে না
- বায়ারের ট্রাস্ট অর্জন করতে সম্পূর্ণ অক্ষম, এই বিষয়টাতে ন্যূনতম খেয়াল কেউ করছে না।
- বিজনেস গ্রোথ মডেল যদি যথাযথভাবে বুঝতে সক্ষম হন (আরো কয়েকটি পর্ব আলোচনা বাকি আছে ), তাহলে যথেষ্ট স্পষ্ট হবে যে, এই ফ্রীবি বা ফ্ল্যাশ সেল আপনার বিজনেসকে কত দ্রুত চাঙ্গা করে, যদিও এর ফলে আপনার লস হয়।
সারা বিশ্বে এইরকম অসংখ্য এক্সাম্পল পাবেন এই ফ্ল্যাশ সেলের। কিছু নমুনা :
- মাত্র ১ ডলারে দুপুরের লাঞ্চ !
- গেট ইনস্ট্যান্ট একসেস @ হলিউড ব্লকবাস্টার সিরিজ অনলি ১ ডলার |
- গো ড্যাডি থেকে কে কে ১ ডলারে ডোমেইন হোস্টিং নিয়েছেন ?
- গেট ইনস্ট্যান্ট ওয়েট লস থেরাপি অনলি ১ ডলার
- গেট ইয়ারফোন, হেডফোন অনলি বাই ১ ডলার
- ১৯ ডলারের ব্রেসলেট নিন একদম ফ্রি
- গেট দিজ সফ্টওয়ার জাস্ট ফর ১০ ডলার
৮) শুধুমাত্র এই ফ্রীবি বা ট্রিপওয়ার এর উপর মস্ত বড় মার্কেট প্লেস গড়ে উঠেছে, বলতে পারেন নাম কি?
ফাইভারডটকম। যেকোন কাজ করাতে পারবেন মাত্র ৫ ডলারে। হাইয়েস্ট কুয়ালিটি সার্ভিস পাচ্ছেন মাত্র ৫ ডলারে | এবং প্রত্যেকটা সেলারের পরবর্তীতে কাস্টম প্ল্যান এন্ড প্রাইসিং গিগ রয়েছে। একবার সার্ভিস নিয়েই দেখেন। পরে ৫০ ডলারের কাস্টম গিগ অফার করবেন, আপনি-ই।
৯) বিশ্বের সমস্ত অনলাইন সফ্টওয়ার, টুলস গুলোর ১৪ বা ৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়াল আছে।
কেন এই ব্যবস্থা ?
কিছু কিছু টুলস সারাবছর ফ্রি তে ইউজ করতে পারবেন (লিমিটেড ফ্যাসালিটি)। যেগুলোতে ফ্রি ট্রায়াল দেয়া সম্ভব নয় (মার্কেটিং অটোমেশন জাতীয় টুলস গুলোতে) সেখানে তারা ডেমো দেখায়।
এর কারণ কি?
এত্ত নামি দামি টুলস গুলো আপনাকে ফ্রীতে ইউজ করতে দেয় কেন?
এর কারণ একটাই, আপনার প্রব্লেম সল্ভ করার জন্যই তাদের জন্ম হয়েছে। আর তাই, আপনি যত চুনোপুটি-ই হন না কেন, তাদের কাছে মহামূল্যবান। তারা এক একজন মাল্টি বিলিওনার হয়েও আমার আপনার মতো ৫ টাকা দামের কাস্টমারদের অনেক ভ্যালু প্রদান করে। তারা মনে করে, আপনি সমস্যায় পরে গুগল এ খুঁজে খুঁজে তাদেরকে পেয়েছেন। এখন তাদের টুলস ইউজ না করা মানে হল – তাদের প্লাটফর্ম আপনার প্রব্লেম সল্ভ করতে পারছে না। আর সেজন্যই একদিকে আপনাকে ফ্রি ট্রায়াল উপহার দিচ্ছে আর অন্যদিকে তাদের টুলসগুলো কন্টিনিউয়াস আপডেট করছে।
আপনি গত ২ বছরে কাস্টমার স্যাটিস্ফেকশনে কি কি বিষয় আপডেট করেছেন ?
নাকি খালি ভাবছেন, “আগে কত সুন্দর অর্ডার পাইতাম !”
১০) যে ফেসবুকের উপর ডিপেন্ড করে ই-কমার্স এ নেমেছেন, সেই ফেসবুকে ইচ্ছেমতো পেইজ খুলতে পারছেন, একদম ফ্রি ! এটা ফ্রীবি। কিন্তু পেইজে প্রোডাক্ট প্রমোশন চালাতে হলে পেমেন্ট করতে হয়। এটা ফেসবুকের কোর প্রোডাক্ট। ফেসবুকের ব্লোপ্রিন্ট কোর্স হল ফ্রীবি।
১১) গুগল এ কিছু লিখে সার্চ দিলে অসংখ্য সাইট লিস্ট হাজির হয়। কোনো একটাতে গেলে ব্লগ পান। আপনার যা জানা প্রয়োজন, সবকিছু ডিটেইলস পাচ্ছেন টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও সহ। এটা ফ্রীবি। জন লুমার প্রতি সপ্তাহেই একটা করে ব্লগ লিখে আপনার মেইল বক্সে পাঠায়। আপনি বিনা পয়সায় সেটা পড়ে অনেক কিছুই শিখেন। ওই ব্লগের নিচে কোর প্রোডাক্ট (পেইড কোর্স ) এর আহ্বান থাকে। এই ব্লগের উদ্দেশ্যই হল : আপনি ব্লগ পড়ে বুঝতে পারবেন, তিনি এই বিষয়ে গভীরতর নলেজ রাখেন এবং তিনি এই বিষয়ে একজন অথরিটি পার্সন। সো, তার কাছ থেকে কোর প্রোডাক্ট গ্রহণ করলে আপনি আরো সমৃদ্ধ হবেন, প্রতারিত হবেন না।
১২) কোনো কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে ও শিখতে আপনি ইউটিউবে সার্চ দেন। ফ্রীতেই শিখতে পারছেন। এটা ফ্রীবি। ওই ভিডিওর বিভিন্ন সময়ে যথাযথ কল-টু-একশন থাকে। আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছে আরো ডিটেইলস জানতে ওয়েবসাইটে গিয়ে কোর প্রোডাক্ট গ্রহণ করতে।
এইরকম লক্ষ লক্ষ এক্সাম্পল রয়েছে ফ্রীবি বা ট্রিপওয়ার বা ফ্ল্যাশ সেল এর। এবং এইসবের পিছনে রয়েছে এক মস্ত বড় লক্ষ্য- কাস্টমারকে কোর প্রোডাক্ট গ্রহণ করানো। আর লক্ষ্য বিহীন সো কল্ড ফ্রীবি, ফ্ল্যাশ সেল, ট্রিপওয়ার থাকলে সেই বিজনেস আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। তাই, সঠিক বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান আহরণ করে সঠিক পন্থায় বিজনেস করতে পারলে কাস্টমারের মুখে হাসি ফুটাতে পারবেন আর আপনিও হ্যাপি থাকতে পারবেন।