অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা - Online Business

Breaking

Home Top Ad

 


Saturday, January 5, 2019

অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা


বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে বিদ্ধমান আছে। এর কারণ হল মানুষের অজ্ঞতা বা অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে না জানা বা কোন কিছু না বুঝে অঝতা ভুল বোঝা। নিম্নে বিষয়গুলো দেওয়া হল ;

একঃ- 
ব্যবসা বাণিজ্য আসলে অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার। এই ব্যবসায়ও নিশচয় অনেক টাকা লাগে। আমার তো এতো টাকা নেই। ব্যবসা কিভাবে করবো?

উত্তরঃ- 
ব্যবসা বাণিজ্য করতে অনেক টাকা লাগে, কিন্তু কম টাকায়তো মানুষ ব্যবসা করেছে। কেয়া কসমেটিক্স এর মালিক খালেক সাহেব মুরগী বিক্রি দিয়ে শুরু করেছিলেন। আজাদ প্রোডাকসের মালিক আযাদ সাহেব ফুটপাতে ভিউকার্ড আর পত্রিকা বেচা দিয়ে শুরু করেছিলেন। তাই বলছি অল্প দিয়েও শুরু করা যায়।

১. আর অনলাইন ব্যবসা /ই কমার্সে এই সুযোগটা সবচে বেশী। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন আপনি বাসায় বসে শুধূ ওএলএক্স, বিক্রয় ডটকম, ফেইসবুক পেইজ  বিজ্ঞাপন দিয়ে শুধু ঢাকা শহরে শীতের পিঠা বেচবেন। বলুনতো কতটাকা পুঁজি লাগবে। আমারতো মনে হয় তিন হাজারের বেশী নয়।

২. আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন আমি শুধু একটা একাউন্টিং সপ্টওয়ার কোম্পানীর সাথে কথা বলে তাদের পোডাক্টস সেল করবে। ধরুন আপনি আই কর্পোরেশন এর একাউন্টিং সপ্টওয়ার আপনি বিভিন্ন কোম্পানীতে মেইল পাঠিয়ে মার্কেটিং করে বিক্রি করলেন। প্রতি পিসে কোম্পানী আপনাকে ১০ হাজার টাকা কমিশন দিলো। আপনি সারামাসে মাত্র দুটি বিক্রি করলেন। আপনি বলুনতো কতটাকা পুঁজি গিয়েছে। বড়োজোর মাসের ইন্টারনেট বিলটা আর ফোন খরচ।

দুইঃ- 
অনলাইন ব্যবসা / ই কমার্স মানে কম্পিউটার, আইটি, ওয়েব সাইট এইসব ব্যাপার আমারতো কোনো আইটি নলেজ নেই। কম্পিউটার সাইন্স নিয়েও পড়িনি। কিভাবে অনলাইন ব্যবসা /ই কমার্স চালাবো।

উত্তরঃ-
১. সব ব্যবসায় বড়ো ছোটো আছে। আপনার বাসার গলিতে যে স্বর্নকার সে স্বর্নের ব্যবসা করে আর আপন জুয়েলার্সর স্বর্ণের ব্যবসা করে। সোনার মতো দামী জিনিসের ব্যবসায় যদি বড়ো ছোটো থাকতে পারে। তাহলে অন্যন্যগুলোতে নিশ্চই থাকেব।

২. ওএলএক্স, বিক্রয় ডটকম, ফেইসবুক পেইজ  যদি প্রতিদিন হাজার হাজার প্রোডক্টস সেল হয়। এতে যারা প্রোডক্টস সেল করে তারাকি আইটি বিশেষজ্ঞ। নিশ্চই নয়। তাহলে অনলাইন ব্যবসা /ই কমার্স অতো আইটি জ্ঞান জরুরী নয়। আপনার ফেসবুক জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ঠ।

আর কোনো কারণে আপনি যদি বড়ো কিছু করতে চান। মানে নিজেই একটা অনলাইন ব্যবসা /ইকমার্স সাইট খুলে ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে সঠিক সার্ভিস দেয়ার জন্য ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কোনেটারই অভাব নেই। আপনি খবর নিয়ে দেখুন প্রথম প্রজন্ম এবং বর্তমানেও শুধূ ই কমার্স নয় যারা আইটি ব্যবসা সফল হচ্ছে তারা বেশীরভাগেরই আইটি ব্যাকগ্রাইন্ড নেই। যেমনভাবে যারা ব্যবসায় ভালো করছে তারা সবাই ব্যবসা- বাণিজ্য নিয়ে লেখাপড়া করেনি। ব্যবসা হচ্ছে ব্যবসায়িক কনসেপ্ট, প্ররিশ্রম আর মেধা। ব্যস।

তিনঃ- 
ওরে বাবা অনলাইন, ওয়েবসাইট, ই মেইল, ইন্টারনেট নেট সব জায়গায় শুধু ইংরেজী লেখা। আমিতো ভালো ইংরেজী জানি না। আমি এই ব্যবসা কিভাবে চালাবো?

উত্তরঃ-
১. আমাদের দেশের একজন অশিক্ষিত লোক যদি ইংরেজদের দেশে গিয়ে দোকানে ইংরেজ কাস্টমার সামলায়, আপনি কেন ভয় পাবেন।

২. একটি ৩ বছরের শিশুর শব্দভান্ডার ১৫০০-২০০০ পর্যন্ত। সে কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ শিক্ষিত লোকের ইংরেজী শব্দভান্ডার ৫০০০-১৫,০০০ পর্যন্ত তাহলে আপনি ঘাবড়াচ্ছেন কেন?

৩. আপনার ক্লায়েন্ট যদি বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী হয়। আপনি কেন ইংরেজীতে কার্যক্রম নিয়ে ভয় পাবেন।

৪. আপনি আপনার মোবাইল ফোন চালানোর জন্য ৩০-৯০টা ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন। আর স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২৫0-৩00 তে গিয়ে দাড়ায়। আবার এসব অনেক শব্দের অর্থ আপনি বোঝেন না। কিন্তু ফাংশান বোঝেন বলে অপারেট করতে পারেন। তাহলে আপনি যখন আপনার অনলাইন শপ ডেভেলেপ করবেন। পন্যেও নাম বাদ দিলে ৭৫-১২৫ টি শব্দ আপনার বার বার সামনে আসবে। তাহলে বিষয়টি কঠিন হওয়ার তো কোন কারণ নেই।

৫. আর ভাষা শেখে মানুষ ব্যবহার করতে করতে। আপনিই আস্তে আস্তে আপনার কাজে লাগার মতো ইংরেজী জেনে যাবেন। আশা করি।

চারঃ- 
ব্যবসা বাণিজ্য মানেইতো হাজার ঝামেলা। মাল কেনো, পরিবহন খরচ দাও, স্টোর কর শোরুমে সাজাও, বিজ্ঞাপন দাও, কাস্টমার আনো, বেচো তারপর লাভ। আবার লাভ নাও হতে পারে। লসও হতে পারে। কি দরকার এত ঝামেলার।

উত্তরঃ-
১. আসলে কি ঝামেলা ছাড়া কোনো কাজ হয়? আপনি আজ যে ভাত খেলেন। তাতে কতটি আইটেম ছিলো। আর সেগুলো ভিন্ন দোকান থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কিনে একত্র করা হয়েছে। আর প্রতিদিন করা হয় বলে। খাবার টেবিলে সময় চলে আসে বলে আমরা টের পাইনা।

২. তবে এ ব্যবসার ক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্যবসার চেয়ে কম ঝামেলা করে ব্যবসা করা যায়। আগেই বলেছি পন্য স্টক, স্টোর, শোরুম ইত্যাদি ছাড়া যদি অনলাইন ব্যবসা /ই কমার্স করা যায়। তাহলে অসবিধা কি?

৩. তবে আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো আপনি কস্ট করেই ব্যবসা করবেন।

৪. ব্যবসায় লস হতেই পারে। তবুও কি কি কারণে লস হতে পারে। সেগুলো আগেই লিখুন, এবং লিখুন তার সমাধানগুলো। যদি লস হয়েই যায় তাহলে সেটা রিকভার দেয়ার জন্য নতুন পদক্ষেপ নিন। কিন্ত  যদি আপনি প্রতি পদক্ষেপে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাহলে আপনি হয়তো সেসব ভাগ্যবানদের একজন হতে পারেন। যারা জীবনে প্রথমবার সফল হয়েছিলেন। আর আপনি প্রথম কয়েকমাসের লসকে একটা বিনিয়োগ হিসেবে ধরুন। আপনি সর্তক থাকবেন লস খাতে আপনার বিনিয়োগ যেন একটা মাত্রা অতিক্রম না করে। অনেকেই প্রথম লস দিয়ে ব্যবসা দাড় করান। এটা ব্যবসায়িক পলিসির একটা অংশ।

পাঁচঃ- 
ব্যবসা করতে নানা কাঠখড় পোড়াতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ভ্যাট, ট্রেডমার্ক, কোম্পানী রেজিস্ট্রেশান, অফিস নেয়া, কর্মচারী নিয়োগ আরো ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপার।

উত্তরঃ-
আপনি এগুলোর সব কিছু করেন ব্যবসা করতে পারেন। আবার না করেও করতে পারেন। ফুটপাতের যে চটপটিওয়ালা মাসে ২০ হাজার টাকা রোজগার করে বৌ-বাচ্চা খাওয়ায়, ঘরভাড়া দেয়। সে এসবের কিছুই করেনা তবু সে ব্যবসা করে। তাহলে আপনি যদি ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আপনার এতো ভাবনাটা কিসের?

ছয়ঃ- 
ভাই সবাই বলে ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করা যায়। আমি বুঝতে পারছিনা এটা কিভাবে সম্ভব?

উত্তরঃ-
এটা একইভাবে সম্ভব এবং অসম্ভব। ঘর দিয়েই বলি। আপনি যে ঘরে বসে ব্যবসা করছেন। সে ঘরটা কি ঘরে বসেই তৈরী করা হয়ে গেছে। তার তার জন্য হয়তো কোনো একটা হাউজিং কোম্পানীর উপর ভরসা করতে হয়েছে। অথবা ইট বালি, জমি সিমন্ট, মার্টি কাটা, ফাইলিং, প্রায় সব মিলিয়ে ১৫০ জন ব্যবসায়ীর উপর নির্ভর করতে হয়েছে। তারপর এখন আপনি সে ঘরে বসে আছেন।
আপনি যদি আপনার সাপ্লাই, প্যাকিং, ডেলিভারী, বিজ্ঞাপন, কাস্টমার তৈরী সব ঘরে বসে একটা থার্ড পার্টিকে দিয়ে করাতে পারেন। তাহলেতো হলোই। অথবা প্রতিটা কাজ ভিন্ন ভিন্ন পার্টিকে দিয়ে যদি করিয়ে নিতে পারেন। তাহলেও তো সম্ভব। মনে রাখবেন ঘরে বসে ব্যবসা করা যায় কিন্তু ঘরে বসে ব্যবসা শেখা যায়না।

তবে আমি পরামর্শ দেবে। আপনি হয়তো ব্যবসা পরিচালনার ভেন্যু বা মোকাম হিসেবে আপনার ঘর কে বেছে নিতে পারেন। কিন্তু ঘরে বসে ব্যবসা করবেন না। প্রতিটি স্থানে অন্তত একবার হলেও নিজে ভিজিট করে দেখে শুনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।