বিটকয়েন পরিচিতি | বিটকয়েন কি এবং কিভাবে কাজ করে ? - Online Business

Breaking

Home Top Ad

 


Tuesday, June 12, 2018

বিটকয়েন পরিচিতি | বিটকয়েন কি এবং কিভাবে কাজ করে ?



বিটকয়েন’ বর্তমানে আলোচিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)। ‘ক্রিপ্টো’ মানে অদৃশ্য, গোপন, সিক্রেট। কারেন্সি মানে মুদ্রা। সহজে বললে এমন একটি মুদ্রা, যা  অদৃশ্য, সংকেত বা নাম্বারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, এর না আছে নিজস্ব বস্তুগত কোন আকার, না তা স্পর্শযোগ্য। তেমনিভাবে এর না আছে নিজস্ব কোন মূল্যমান বা ফায়দা (Intrinsic Value)

আর ‘বিটকয়েন’-এ bit শব্দের অনেক অর্থ। যেমন, টুকরো, ছোট অংশ, অল্প, কিছুক্ষণ। এর আরেক অর্থ, কম্পিউটারে ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ততম তথ্য। এখানে শেষোক্ত অর্থই উদ্দেশ্য। যেহেতু এটি কম্পিউটারের ক্ষুদ্র তথ্যকে ব্যবহার করে তৈরি হয়, তাই একে ‘বিটকয়েন’ বলা হয়।

ইন্টারনেটে ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক আছে। যেমন, Ripple, Ethereum ইত্যাদি। এসবের মধ্যে বর্তমানে ‘বিটকয়েন’ সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে আলোচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি। এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির কিছু কমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এবং কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কারেন্সির প্রস্তুতকারীগণ নির্ণয় করে থাকেন। আমাদের বক্ষ্যমাণ আলোচনা কেবল বিটকয়েন নিয়ে, যার সাথে অন্যগুলোর কিছু পার্থক্য আছে, এবং যা শরঈ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা জরুরী।

এটি বিশেষ হার্ডওয়্যার দ্বারা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংকেত আকারে তৈরি হয়। অন্য কথায়, এটি একটি ভার্চুয়াল টোকেন, যাকে এর প্রস্তুতকারীগণ বিনিময়ের মাধ্যম বা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করেছেন। অন্য যে কোনো পন্যের ন্যায় বিটকয়েনেরও চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে অন্যান্য ফেইথ (Faite) মুদ্রার সাথে এর মূল্যমান কম-বেশি হয়ে থাকে।

২০০৮ইং সনের নভেম্বরে এক অজ্ঞাত সংস্থা বা ব্যক্তি কর্তৃক একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়।

যার ছদ্ম নাম ‘সাতোশী নাকামোতো (Satoshi Nakamoto)’। এই আর্টিকেলের ভিত্তিতে ২০০৯ইং সনের জানুয়ারীতে প্রথম বিটকয়েনের ঘোষণা দেয়া হয়। ধারণা করা হয় এই ছদ্মনাম বিশিষ্ট ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন বিটকয়েনের মধ্যে মাত্র ৫% উৎপন্ন করেছে। এটি করা হয়েছে মাইনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। 

যেভাবে বিটকয়েন তৈরি হয় :
কাগুজে মুদ্রা তৈরি হয় টাকা ছাপানোর মেশিনে। সরকার একে অনুমোদন করে। নিয়ন্ত্রন করে। এভাবে এতে সৃষ্টি হয় ক্রয়-ক্ষমতা (Purchasing power)। কিন্তু বিটকয়েন তৈরি হয় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। এটি তৈরির প্রধান উৎস-‘ব্লক চেইন (Blockchain) নামক এক উন্নত প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটি আবিষ্কার হয়েছে ১৯৯১ইং সনে।

ব্লকচেইন (Blockchain) একটি প্রযুক্তিগত ফ্রেমওয়ার্ক, যার ওপর বিটকয়েন তৈরি করা হয়েছে। ব্লক চেইন একটি চমৎকার প্রযুক্তি। সংক্ষেপে তার বিবরণ দেয়া হল।

ব্লক চেইন প্রযুক্তিঃ সাধারণত আমরা আরেক জনের কাছে টাকা পাঠাই তৃতীয় কোন মাধ্যমে। যেমন, ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। তদ্রুপ জমির মালিকানা হস্তান্তর করি ভূমি অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায়। এসব তৃতীয় পক্ষ লেনদেনে মধ্যস্থতা করার পাশাপাশি অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তাও প্রদান করে।

আমাদের লেনদেনের যাবতীয় তথ্য তাদের নিকট সংরক্ষিত থাকে। এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের অনেক সুবিধার মাঝে তিনটি অসুবিধাও আছে। যথা-এক. অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। দুই. লেনদেন সম্পন্ন হতে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ হয়। তিন.তৃতীয় পক্ষের নিকট সকল ডাটা চলে যায়। মূলত এই অসুবিধাগুলো দূর করতে আবিস্কৃত হয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক এক বিশেষ ব্লক চেইন প্রযুক্তি। এর দুটি অংশ। যথা-

ক.Open Ledger বা উন্মুক্ত খাতা:

ইন্টারনেটে ব্লক চেইন প্রযু্িক্ত ব্যবহার করে যখন কেউ কারো নিকট অর্থ বা অন্য কোন তথ্য পাঠায়, তখন ব্লক চেইন নেটওয়ার্কে যারা লেজার মেইন্টেইন করে তাদের লেজারে সেই ডাটাগুলো ব্লক হয়ে  যুক্ত হয়। যেমন-A-b-C-d-e-F। ধরা যাক A ১০০ টাকা পাঠিয়েছে b এর নিকট। তদ্রুপ b কিছু পাঠিয়েছে C এর নিকট। এভাবে প্রত্যেকে তার পরের জনের নিকট কিছু অর্থ পাঠিয়েছে। এই পাঠানো তথ্যগুলো জমা হবে তাদের নিকট যারা লেজার মেইন্টেইন করে।

এখানে বড় হাতের ইংরেজী অক্ষর হল সেই লেজার মেইন্টেইনকারী। পরিভাষায় তাদেরকে Minersও বলা হয়। মনে রাখতে হবে, এখানে যে লেনদেনগুলো হল, এগুলো করার সাথে সাথে পূর্ণতায় পৌঁছে না। তথা সাথে সাথে বাস্তবেই অর্থ স্থানান্তর হয় না। বরং লেনদেনটি করা মাত্রই একটি ব্লক তৈরি হয়। উক্ত ব্লকে প্রতি দশ মিনিটের মধ্যে যেসব ট্রাঞ্জাকশন হয়, তা রেকর্ড হয়ে যায়।

খ. Distributed Ledger:

উক্ত ব্লক তৈরি হওয়ার পর সেটা ব্লক চেইন নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে যায়, এবং পৃথিবীজুড়ে হাজারো কপি তৈরি হয়। তখন সেটা উপরোক্ত প্রত্যেক মাইনারের লেজারে ব্লক হিসেবে এসে যায়। কিন্তু এতেই উক্ত ট্রাঞ্জাকশন Validate হয়নি। অর্থাৎ বাস্তবেই অর্থ স্থানান্তর হয়নি। এখন তাকে Validate করার জন্য সকল মাইনার একযোগে ঐ ব্লক নিয়ে কাজ শুরু করে। তাকে সল্ভ করতে চেষ্টা করে। তাদের কেউ যখন সেটা সল্ভ করে ফেলে তখন ট্রাঞ্জাকশনটি Validate হয়। অর্থাৎ তখন বাস্তবেই যার কাছে টাকা পাঠানো হল সে সেটা পেয়ে যায়। এই সমাধিত ব্লকটি একটি ফাইনাল ব্লক।

এবার এই ব্লকটি প্রত্যেকে মাইনারের নিকট রেকর্ডকৃত পূর্বের সমাধিত ব্লকের সাথে জুড়ে যায়। অনেকটা চেইনের মত। একটির পেছনে আরেকটি জুড়ে। এজন্য একে ব্লক চেইন বলা হয়।

উল্লেখ্য, প্রতিটি সমাধিত ব্লকে তিনটি বিষয় থাকে। যথা-ডাটা, হ্যাশ ও পূর্বের ব্লকের হ্যাশ। হ্যাশ হল, বিশেষ অ্যালগরিদম বা বিশেষ ম্যাথ জাতীয় বিষয়। সেই ম্যাথ সলূশন করা হলে তাকে হ্যাশ বলে। এই হ্যাশটা পূর্বের সমাধিত ব্লকের সাথে মিলতে হবে। তবেই ফাইনাললি ব্লকটি সমাধিত হবে। সর্বপ্রথম যে মাইনর সমাধান করতে পারবে সে বিটকয়েন লাভ করবে।

এসব কাজের মধ্য দিয়েই তার জন্য অটো  বিটকয়েন ক্রিয়েট হয়ে যাবে। বর্তমানে প্রায় প্রতি দশ মিনিটে একটি ব্লক সল্ভ হয়ে যায়। এসব মাইনিং-এর জন্য বেশ পাওয়ারফুল কম্পিউটার ও বিশেষ মেশিনের প্রয়োজন হয়। অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। মোটা অংকের টাকা এসব খাতে ইনভেষ্ট করতে হয়।


বিটকয়েন ও একটি উদাহরণ
আমাদের দেশে বিভিন্ন শপিং মলে এরূপ প্রচলন আছে যে, কোন পণ্য ক্রয় করা হলে একটি পয়েন্ট দেয়া হয়। এটি একটি সংখ্যা। ভার্চুয়াল টোকেন। এই পয়েন্ট যখন একটি নির্ধারিত পরিমাণে পৌঁছে, তখন তা দিয়ে ঐ দোকান থেকে কোন কিছু ক্রয় করা যায়। এর অর্থ এই ভার্চুয়াল পয়েন্টকে একটি বিনিময়ের মাধ্যমের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বিটকয়েন  কনসেপ্ট অনেকটাই এরূপ। একটি সংখ্যা। যা মাইনিং করার পর মাইনর পেয়ে থাকে। মাইনিং-এ উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই  ভার্চুয়াল টোকেনকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যার মূল্য ডিমান্ড অনুযায়ী বাড়ে-কমে।

ব্লক চেইনের বিস্তৃতিঃ ব্লক চেইট প্রযুক্তি মূলত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হয়েছে। যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। তাই এ প্রযুক্তি শুধু বিটকয়েন উৎপন্নে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। জমির দলিল সংরক্ষণের জন্যও এর ব্যবহার চিন্তা করা হচ্ছে। এমনটিক এর মাধ্যমে যাকাত সংগ্রহ ও আদায়ের চিন্তাও চলমান।

নিরাপত্তাঃ উক্ত প্রযুক্তিতে সকল ডাটা অগণিত মাইনিংকারীদের লেজারে সংরক্ষিত থাকে। ফলে সেটা হ্যাক করতে হলে একই সময় অগণিত কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। এজন্য বলা হয়, এটি সেন্ট্রালাইজড মাধ্যম থেকেও নিরাপদ।

বিটকয়েন মাইনিংঃ Mining শব্দের মূল অর্থ: মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ বের করা বা আবিষ্কার করা। এখানে বিশেষ এ্যলগরিদম সল্ভ করার মাধ্যমে মূল্যবান বিটকয়েন লাভ হয়। তাই একে মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ বের করার সাথে তুলনা করে ‘মাইনিং’ বলা হয়েছে। যারা এই কাজটি করেন, তাদেরকে বলা হয়-‘মাইনর’(Miner)।

বিটকয়েন মাইনিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, দু’জন লেনদেনকারীর মালিকানা যথাযথভাবে ট্রান্সফার করাকে নিশ্চিত করা। এই নিশ্চিতকরণটা পূর্বোক্ত পন্থায় যে আগে করতে পারবে সেই  কিছু বিটকয়েন লাভ করবে।

এভাবে ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন একক তৈরি করা যাবে। এভাবেই উক্ত প্রযুক্তির প্রোগ্রাম সেট করা আছে। এরপর আর নতুন করে বিটকয়েনের কোন একক তৈরি করা সম্ভব হবে না। (অর্থাৎ তখন আক্ষরিক অর্থেই মাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে)। তবে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের সত্যায়নের কাজ মাইনিংকারীরা করে যাবে আগের মতই। তখন বিটকয়েনের বহু ক্ষুদ্র একককে কাজে লাগানো হবে। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন।

বিটকয়েন সংগ্রহঃ বিটকয়েন মূলত দুটি পন্থায় সংগ্রহ করা হয়। যথা-এক. মাইনিং করে। এর বিবরণ পূর্বে দেয়া হয়েছে। দুই.ক্রয় করে। যার কাছে বিটকয়েন আছে সেটা কাগুজে মুদ্রায় ক্রয় করা। বিটকয়েন সংগ্রহের জন্য দ্বিতীয়টিই এখন পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। একেই বলা হয় ‘বিটকয়েন


বিটকয়েন সংরক্ষণঃ ইলেক্সট্রনিক বিশেষ পন্থা তথা E-Wallet এর মাধ্যমে বিটকয়েন সংরক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে বিটকয়েন বেচা-কেনাও করা হয়।  কয়েকটি প্রসিদ্ধ ই-ওয়ালেট হল-

  • Computer Wallets: এর মাধ্যমে বিটকয়েন প্রেরণ করা, গ্রহণ করা সবই সম্ভব। 
  • Phone Wallets: এটি অনেকাংশেই প্রথমটির মত। এর মাধ্যমে ঘঋঈ (NFC (Near field communication) টেকনোলজি ব্যবহার করে ক্রয়কৃত বিভিন্ন পণ্যের দামও শোধ করা যায়। 
  • Web wallets: বিটকয়েন ব্যবহারকারী এর মাধ্যমে নির্ধারিত সাইটে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। এটি অনেকটা ই-মেইল খোলার মত। এরপর নির্ধারিত একাউণ্ট খোলে তাতে বিটকয়েন সংরক্ষণ করা হয়। 
  • Hardware wallets: এটি ছোট একটি মেশিন জাতীয়। যার কাজই হল বিটকয়েন সংরক্ষণ করা। অন্য কোন কাজ নয়। এতে অন্য কোনও প্রোগ্রাম আপলোড করা যায় না। ইলেক্ট্রনিক চুরির ক্ষেত্রে এটি পূর্বের সকল পন্থার চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা দান করে।