বিটকয়েন নেটওয়ার্ক হল একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক যা ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে নামাঙ্কিত মেসেজ চালাচালির মাধ্যমে বিট কয়েন আদান-প্রদান করেন। লেনদেনগুলো ব্লকচেইন নামে পরিচিত একটি বন্টিত,প্রতিলিপিকৃত পাবলিক ডাটাবেসে রেকর্ড করে রাখা হয় এবং মাইনিং নামের প্রুফ অফ ওয়ার্ক প্রোটোকল ব্যবস্থায় ঐক্যমত্য অর্জিত হয়। বিটকয়েনের ডিজাইনার সাতোশি নাকামতো দাবি করেন, বিটকয়েনের ডিজাইন ও কোডিং ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০০৯ সালে মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে অবমুক্ত করা হয়।
লেনদেন শেয়ার করার জন্য বিটকয়েন নেটওয়ার্কের ন্যূনতম কাঠামো দরকার হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ-বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কই এ জন্য যথেষ্ট। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার ভিত্তিতে বার্তাগুলো প্রচার করা হয়।নোডগুলো ইচ্ছেমত নেটওয়ার্ক থেকে অব্যাহতি নিতে পারে,পুনরায় সংযুক্ত হতেও পারে। পুনঃসংযোগের পর একটি নোড ব্লকচেইনের স্থানীয় কপি সম্পূর্ণ করার জন্য অন্যান্য নোডের নতুন ব্লকগুলো যাচাই করে ও ডাউনলোড করে।
লেনদেন:
একটি বিটকয়েনকে ডিজিটাল উপায়ে স্বাক্ষরিত লেনদেনের ক্রম হিসেবে প্রকাশ করা যায়, যা ব্লকের পুরস্কার হিসেবে বিট কয়েনের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হয়। বিটকয়েনের মালিক সাধারণ নিয়মে ব্যাংক চেক অনুমোদন করার মত বিটকয়েন লেনদেন ব্যবস্থায় ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিটকয়েনটি পরবর্তী মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন। একজন প্রাপক মালিকানার শৃঙ্খল যাচাইয়ের জন্য পূর্বে কৃত প্রতিটি লেনদেন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তবে সাধারণ চেক অনুমোদনের মত বিট কয়েন প্রতিবর্তনযোগ্য নয়, যে কারণে চার্জব্যাক জালিয়াতির ঝুঁকি দূর হয়।
যদিও প্রতিটি বিটকয়েনকে পৃথকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব, কিন্তু কোন লেনদেনে প্রতিটি বিটকয়েনের জন্য পৃথক লেনদেনের দরকার হলে তা বেশ জটিল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়াত। সেজন্য একটি লেনদেনে একাধিক ইনপুট ও আউটপুট থাকতে পারে, যাতে করে বিটকয়েনগুলো আলাদা হতে পারে আবার একীভূত হতেও পারে। সাধারণ লেনদেনে হয় পূর্বে কৃত কোন বড় লেনদেন থেকে একটি একক ইনপুট থাকবে অথবা আগেকার ছোট ছোট লেনদেনের সমন্বয়ে কয়েকটি ইনপুট থাকবে। আর আউটপুট থাকবে দুইটি- একটি অর্থ পরিশোধের জন্য, অন্যটি প্রেরককে খুচরা অর্থ (যদি দরকার হয়) ফেরত পাঠানোর জন্য। লেনদেনের ইনপুট ও আউটপুটের মোট পরিমাণের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে, তা মাইনারদের কাছে লেনদেনের ফি হিসেবে চলে যায়।
মাইনিং:
একটি বন্টিত টাইমস্ট্যাম্প সার্ভারকে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক হিসেবে তৈরি করার জন্য বিটকয়েন "প্রুফ অফ ওয়ার্ক নেটওয়ার্ক" ব্যবহার করে। এই কাজকে প্রায়শই বিটকয়েন মাইনিং বলা হয়। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর দেয়া থাকে না ,বরং স্বাক্ষরটি খুঁজে বের করা হয়। এ প্রক্রিয়াটি শক্তির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। মাইনার পরিচালনার জন্য মোট খরচের ৯০ শতাংশের বেশি বিদ্যুতের জন্য ব্যয়িত হয়। চীনে মূলত বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য স্থাপিত একটি তথ্যকেন্দ্র পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ১৩৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত ক্ষমতার প্রয়োজন হয়।
সাতোশি নাকামতো-র মূল উদ্ভাবন ছিল ব্লকচেইনের জন্য দরকারি স্বাক্ষর দেয়ার জন্য একটি প্রুফ অফ ওয়ার্ক বা কাজের প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করা। মাইনিং প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে একটি ব্লক চিহ্নিত করা, যা এসএইচএ-২৫৬ র সাথে বার দুয়েক হ্যাশ করা হলে প্রদত্ত কাঠিন্যের লক্ষ্যের তুলনায় ছোট সংখ্যার যোগান দেয়। যেখানে প্রয়োজনীয় গড় কাজের পরিমাণ কাঠিন্যের লক্ষ্যের বিপরীত অনুপাতে বৃদ্ধি পায়, সেখানে এক রাউন্ড দ্বৈত এসএইচএ-২৫৬ চালু করে সব সময়ই একটি হ্যাশকে যাচাই করা যায়।
বিটকয়েন টাইমস্ট্যাম্প নেটওয়ার্কের জন্য এক বার ব্যবহারযোগ্য যে কোন একটি সংখ্যার মান বৃদ্ধি করে বৈধ কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্লকের হ্যাশকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্রগামী শূন্য বিট দেয়ার মত মান পাওয়া না যায়, সংখ্যার মান ততক্ষণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। একবার যখন হ্যাশ প্রক্রিয়াটি একটি বৈধ ফলাফল প্রদান করে, ব্লক কাজটি পুনরায় সম্পাদন করার আগ পর্যন্ত আর পরিবর্তিত হতে পারে না। পরে যখন ব্লকগুলো এর সাথে শৃঙ্খলিত হয়, পরবর্তী প্রতিটি ব্লক পরিবর্তন করার জন্য পুনরায় কাজ করতে হয়।
সবচেয়ে বড় চেইনটি দিয়ে বিটকয়েনে বেশিরভাগের ঐক্যমত্য প্রকাশ করা হয় আর এই চেইনটি তৈরি করার জন্য সর্বাধিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। যদি ক্ষমতা পরিমাপের বেশির ভাগ অংশ সৎ নোড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে সৎ চেইনের সংখ্যাও সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং তা যে কোন প্রতিযোগী চেইনকে ছাড়িয়ে যাবে। বিগত কোন ব্লককে পরিবর্তন করতে হলে, কোন আক্রমণকারীকে সেই ব্লক ও তার পরবর্তী সকল ব্লকের কাজের প্রমাণ অংশটি পুনরায় করতে হবে এবং সৎ নোডের কাজকে ছাপিয়ে যেতে হবে। পরবর্তীতে যতই ব্লক যোগ করা হয়, ততই ধীরগতির কোন আক্রমণকারীর পক্ষে এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারার সম্ভাব্যতা সূচকীয়ভাবে হ্রাস পায়।
অসুবিধা:
বিটকয়েন মাইনিং একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রয়াস। বিটকয়েন মাইন করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন হ্যাশিং প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে এক ধরনের "সেরা অস্ত্রশস্ত্র লাভের প্রতিযোগিতা" দেখা গিয়েছে। অনেক গেমিং কম্পিউটার, এফপিজিএ এবং এএসআইসিতে থাকা সাধারণ সিপিইউ, উচ্চতর জিপিইউব্যবহার করে স্বল্প বিশেষায়িত প্রযুক্তির লাভের পরিমাণ হ্রাস করা হয়। বিটকয়েনের জন্য বিশেষায়িত এএসআইসি এখন বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য মৌলিক উপায়ে পরিণত হয়েছেএবং জিপিইউ-র গতিকে ৩০০ গুণেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। যেহেতু বিট কয়েন মাইন করা আরও কঠিন হয়ে গেছে, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চগতির এএসআইসি পণ্যের বিক্রির হার বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছে।
মাইনার থেকে আয়ের মধ্যে ভিন্নতা কমানোর জন্য কম্পিউটারের ক্ষমতাকে প্রায়ই একসাথে জড়ো করা বা জমা ("পুলড") করা হয়। প্রতিটি মাইনিং রিগকে লেনদেন ও প্রদত্ত অর্থ গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অংশগ্রহণকারী সার্ভার প্রতিবার যখন একটি ব্লকের সমাধান করতে পারে, একটি পুলে অংশগ্রহণকারী সকল মাইনারকে অর্থ পরিশোধ করা হয়। সেই ব্লকটি খুঁজে পেতে প্রতিটি মাইনারের কাজের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এই অর্থ দেয়া হয়। বিটকয়েন তথ্য কেন্দ্রগুলো সাধারণত লোকচক্ষুর বাইরে ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, এছাড়া কম খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এমন এলাকার চারদিকে কেন্দ্রগুলোর গুচ্ছাকারে থাকার প্রবণতাও দেখা যায়।
শক্তি খরচ:
২০১৩ সালে, মার্ক গিমিন হিসাব করেন, বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ ৪০.৯ মেগাওয়াট (এক দিনে ৯৮২ মেগাওয়াট-ঘন্টা ) হতে পারে। ২০১৪ সালে, হাস ম্যাকক্কের হিসেব মতে, এ খরচের পরিমাণ ৮০.৭ মেগাওয়াট (৮০,৬৬৬ কিলোওয়াট)। ২০১৫ সালে, দ্য ইকোনমিস্টের হিসাব অনুযায়ী, সব মাইনার যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারও করে,তারপরও সম্মিলিত বিদ্যুত খরচের পরিমাণ ১৬৬.৭ মেগাওয়াট (প্রতিবছর ১.৪৬ টেরাওয়াট-ঘন্টা ) হতে পারে।
খরচ কমানোর জন্য, বিটকয়েন খনিগুলি আইসল্যান্ডের মতো স্থানে স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ভূ-তাপীয় শক্তি সস্তায় এবং ঠান্ডা মেরুদেশীয় বায়ু বিনামূল্যে পাওয়া যায়। চীনা বিটকয়েন মাইনাররা বিদ্যুৎ খরচ কমানোর জন্য তিব্বতের জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে থাকেন।
প্রক্রিয়া:
বিটকয়েন মাইন করার প্রক্রিয়ার সার্বিক বিবরণ :
- নতুন লেনদেন সকল নোডগুলিতে সম্প্রচারিত হয়।
- প্রতিটি মাইনার নোড একটি ব্লকে নতুন লেনদেন জোগাড় করে।
- প্রতিটি মাইনার নোড তার ব্লক জন্য একটি কাজের প্রমাণের কোড খুঁজে পেতে কাজ করে।
- যখন একটি নোড একটি কাজের প্রমাণ খুঁজে পায়, এটি সমস্ত নোডগুলিতে ব্লক সম্প্রচার করে।
- নথি গ্রহণ সমস্ত লেনদেনকে বৈধ করে এবং সবগুলো লেনদেন বৈধ হলেই তা গৃহীত হয়।
- অনুমোদিত ব্লকের হ্যাশটি অন্তর্ভুক্ত করে এবং পরবর্তী ব্লকের কাজ শুরু করে নোডগুলো নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ করে।
মাইন কৃত বিটকয়েন:
বিটকয়েন লেনদেন কীভাবে যাচাই করা হয়, তা চিত্রে দেখানো হল
রীতি অনুযায়ী, ব্লকের প্রথম লেনদেনটি বিশেষ ধরনের হয় যা ব্লকের মালিকের মালিকানায় থাকা নতুন বিটকয়েনগুলো উৎপাদন করে। এটি নেটওয়ার্ককে সমর্থন দিতে নোডের জন্য প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি নতুন বিটকয়েনগুলো সঞ্চালনের পথও দেখায়। প্রতি ২১০,০০০০ ব্লক পর মাইনিং এর পুরস্কারের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। ৫০ বিটকয়েন থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, ২০১২ শেষভাগে তা কমে ২৫ হয়ে যায় এবং ২০১৬ সালে ১২.৫ বিটকয়েনে পৌঁছায়।[৬] নতুন বিটকয়েন তৈরি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৬৪ বার চালানোর জন্য এই অর্ধেক করার প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে।
নিরাপত্তা:
বিটকয়েন নেটওয়ার্কে বিভিন্ন সম্ভাব্য আক্রমণ এবং অর্থপ্রদানের পদ্ধতি হিসাবে এর বাস্তব বা তাত্ত্বিক ব্যবহার বিবেচনা করা হয়েছে। বিটকয়েন প্রোটোকলের এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অননুমোদিত খরচ, দ্বিগুণ খরচ, বিটকয়েন জালিয়াতি এবং ব্লকচেইন টেম্পারিং এর মত অনাহূত আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে। অন্যান্য আক্রমণ, যেমন ব্যক্তিগত চাবি চুরির ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন।
অননুমোদিত ব্যয়:
পাবলিক-প্রাইভেট কী ক্রিপ্টোগ্রাফি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অননুমোদিত ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন এলিস ববকে বিটকয়েন পাঠায়, তখন বব বিটকয়েনের নতুন মালিক হয়। ইভ নামের কেউ যদি লেনদেনটি দেখতে পায়, সে হয়তো ববের প্রাপ্ত বিটকয়েনগুলো খরচ করতে চাইতে পারে, কিন্তু প্রাইভেট কী না জানা থাকলে সে এই লেনদেনে স্বাক্ষর করতে পারবে না।
দ্বৈত ব্যয়:
ইন্টারনেটের অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থাকে যে সমস্যাটি অবশ্যই সমাধান করতে হয় তা হল "দ্বৈত ব্যয়", যেখানে একজন ব্যবহারকারী একই বিটকয়েন দুই বা ততোধিক গ্রাহককে দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, এ ধরনের সমস্যা তৈরি হবে যদি ইভ একই বিটকয়েন প্রথমে এলিস আর পরে ববকে পাঠায়। দ্বিগুণ ব্যয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে বিটকয়েন নেটওয়ার্ক সকল বিটকয়েন লেনদেন একটি খতিয়ান (ব্লকচেইন)-এ রেকর্ড করে যা সকল ব্যবহারকারীর কাছে দৃশ্যমান হয় এবং নিশ্চিত করে- লেনদেনকৃত বিটকয়েনগুলো আগে কখনো ব্যয়িত হয় নি।[৮]:4
রেস আক্রমণ:
যদি ইভ এলিসকে কোন পণ্যের বিনিময়ে টাকাপয়সা দেয় এবং সেজন্য লেনদেনের চুক্তি স্বাক্ষরও করে থাকে, এর মধ্যে একই সময়ে একই বিটকয়েন সে ববকেও পাঠানোর জন্য লেনদেনের ব্যবস্থা করতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, নেটওয়ার্ক কেবল একটি লেনদেনই গ্রহণ করবে। একে "রেস আক্রমণ" বলা হয়, কারণ এখানে কোন লেনদেনটি আগে গৃহীত হবে,সে ব্যাপারে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। এলিস চুক্তির এই শর্ত আরোপ করে রেস আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে যে, ব্লকচেইনে ইভের পেমেন্ট দৃশ্যমান হওয়ার আগ পর্যন্ত সে পণ্য সরবরাহ করবে না।
একটি ভিন্ন ধরনের রেস আক্রমণ (যাকে হাল ফিনি-র রেফারেন্স অনুসারে ফিনি আক্রমণ বলা হয়)-এর বেলায় একটি মাইনারের প্রয়োজন হয়। নেটওয়ার্কে (একই কয়েন দিয়ে বব ও এলিস) উভয়কে অর্থ পরিশোধের অনুরোধ পাঠানোর বদলে,ইভ নেটওয়ার্কের কাছে শুধু এলিসকে অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে অনুরোধ জানায়, কিন্তু এদিকে এমন একটি ব্লক মাইন করার চেষ্টা করে যা এলিসের পরিবর্তে ববের পেমেন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে। এক্ষেত্রে ভালোই সম্ভাবনা আছে যে প্রতারক মাইনার নেটওয়ার্ক কর্তৃক এলিসের পেমেন্ট প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পূর্বেই নিজের এ অপকর্ম হাসিল করে ফেলবে। ব্লকচেইনে নিজের পেমেন্ট অন্তর্ভুক্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে এলিস সাধারণ রেস আক্রমণের মত ফিনি অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
ইতিহাস পরিবর্তন:
ব্লকচেইনে যোগ হওয়া প্রতিটি ব্লকের শুরুতে প্রদত্ত লেনদেনের তথ্য সংবলিত একটি ব্লক থাকে যাকে উক্ত লেনদেনের অনুমোদন বলা হয়। আদর্শ ক্ষেত্রে, পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে গেছে ধরে নেয়ার আগে বিটকয়েনের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করা ব্যবসায়ী ও পরিষেবাগুলোকে নেটওয়ার্কে বন্টিত অন্তত একটি অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। কোন ব্যবসায়ী যত বেশি অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করবেন, কোন আক্রমণকারীর জন্য ব্লকচেইনের লেনদেন বিপরীতমুখী করাও তত কঠিন হয় - যদি না আক্রমণকারী মোট নেটওয়ার্ক ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বাগে এনে ফেলে অর্থাৎ ৫১% আক্রমণ করে ফেলে।
ক্লায়েন্টদের ডিঅ্যানোনিমাইজেশন:
ডাটা মাইনিং-এর ক্ষেত্রে ডিঅ্যানোনিমাইজেশন হল এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে বেনামী তথ্যের সূত্র পুনঃচিহ্নিত করার জন্য উক্ত বেনামী উপাত্তকে অন্যান্য তথ্য সূত্রের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। লেনদেনের গ্রাফ বিশ্লেষণ (যা বিটকয়েনের ছদ্মনামী ঠিকানাগুলোর মধ্যে সংযোগ প্রকাশ করে দিতে পারে)-এর পাশাপাশি ব্যবহারকারীর ছদ্মনামকে তার আইপি ঠিকানার সাথে সংযুক্ত করে দিতে পারে এমন আক্রমণও হতে পারে। যদি পিয়ার সংযোগটি "টর" ব্যবহার করে,এমন এক পদ্ধতিতে আক্রমণ করা হয় যেন টর নেটওয়ার্ক থেকে পিয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তারপর পরবর্তী যে কোন লেনদেনের জন্য তাদের প্রকৃত আইপি ঠিকানা ব্যবহার করতে বাধ্য করে। এ ধরনের আক্রমণ বিটকয়েনের পিয়ার ঠিকানা ও অ্যান্টি-ডজ প্রোটেকশন সম্প্রচারের পদ্ধতিরও অসদ্ব্যবহার করতে পারে। একটি সম্পূর্ণ বিটকয়েন নেটওয়ার্কে আক্রমণের জন্য প্রতি মাসে €১৫০০ এর চেয়ে কম খরচ পড়ে।
পেমেন্ট যাচাই:
একটি ব্লকে কোন লেনদেন থাকবে না থাকবে না তা প্রতিটি মাইনার নির্ধারণ করতে পারেন।[১৪] একটি ব্লকে বেশি মাত্রায় লেনদেনের সংখ্যা ওই ব্লকটি সমাধান করতে প্রয়োজনীয় বেশি মাত্রার কম্পিউটেশনাল ক্ষমতার সমান হয় না।
একটি নতুন লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর একটি নোডকে অবশ্যই তা যাচাই করতে হয়; বিশেষ করে লেনদেনের কোন ইনপুট আগে কখনো খরচ হয় নি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হয়। অতঃপর ব্লকচেইনে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় নোডগুলোকেও যাচাই করে দেখতে হয়। কোন ব্যবহারকারী যদি তার নেটওয়ার্কের প্রতিবেশীদের ওপর ভরসা রাখতে না পারেন, তবে তার অবশ্যই ব্লকচেইনের পূর্ণ অনুলিপি রেখে দেয়া উচিত, যেন যে কোন ইনপুট যাচাই করা সম্ভব হয়।
নাকামতো-র শ্বেতপত্রে যেমনটি লেখা রয়েছে- একটি পূর্ণ নেটওয়ার্ক নোড না চালিয়েও বিটকয়েন পেমেন্ট যাচাই করা সম্ভব (যাকে সরলীকৃত পেমেন্ট যাচাই বলা হয়)। এ পদ্ধতিতে একজন ব্যবহারকারীর দীর্ঘতম চেইনের ব্লক হেডারগুলোর শুধু একটি অনুলিপি দরকার হয়- যা দীর্ঘতম চেইনটি পাওয়ার আগ পর্যন্ত নেটওয়ার্ক নোড অনুসন্ধান করে পাওয়া যায়। তারপর নির্ধারিত ব্লকে লেনদেনকে সংযুক্ত করে মার্কল শাখা পাওয়া যায়। চেইনের কোন জায়গায় লেনদেনটি সংযুক্ত করতে পারলে বোঝা যায়, নেটওয়ার্ক নোড এটি গ্রহণ করেছে এবং এর পরবর্তীতে যোগ করা ব্লকগুলো এ ব্যাপারে আরও নিশ্চয়তা দেয়।
ব্লকচেইনের উপাত্ত:
ব্লকচেইনে যে কোন ডিজিটাল ফাইল সংরক্ষণ করা সম্ভব- লেনদেনের আকার যত বড় হয়, সংশ্লিষ্ট ফি-র পরিমাণ তত বেশি হয়। বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী - ইউআরএল থেকে শিশু পর্ণোগ্রাফি, বেন বারন্যাঙ্ক এর এএসসিআইআই আর্ট ইমেজ, উইকিলিকস ক্যাবলের কোন সামগ্রী, বিটকয়েন মাইনারদের প্রার্থনা এবং অরিজিনাল বিটকয়েনের শ্বেতপত্র এর মাঝে নিহিত থাকতে পারে।